প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হচ্ছে
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। সরকার এ বিষয়ে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জোটের শরিক দলের নেতারা। গতকাল সোমবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১৪ দলের এ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে জামায়াত–শিবির গোষ্ঠীর অপশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য। ১৪ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ মনে করেন, বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, শিবির তাদের দোসর উগ্রবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নস্যাত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র করছে। অতিসমপ্রতি চোরা–গোপ্তা হামলা করে এবং গুলি বর্ষণ করে সরকারের উপর দায় চাপাতে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ মানুষ হত্যা করে লাশ পর্যন্ত ঝুলিয়ে রেখেছে। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যে প্রক্রিয়ায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতীয় স্বার্থে দেশবিরোধী এ অপশক্তিকে নির্মূল করা প্রয়োজন।’ খবর বিডিনিউজের।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সহিংস রূপ দেওয়ার পেছনে বিএনপি ও জামায়াতকে দায়ী করে আসছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। তার মধ্যেই আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত এলো। বৈঠক শেষে ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক বলেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, জামায়াত–শিবির সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রাষ্ট্রের উপর আক্রমণ এখনো বন্ধ করেনি। তাই মনে করি বাংলাদেশের সাংবিধানিক ধারা, গণতান্ত্রিক ধারা, রাজনীতিকে রক্ষা করতে হলে বাংলাদেশের সন্ত্রাসী, জঙ্গি, সশস্ত্র গোষ্ঠীর রাজনীতি ধ্বংস করার লক্ষ্যে তা নিষিদ্ধ করা দরকার। আজকে ১৪ দলের সভা থেকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জামায়াত শিবিরকে সংগঠনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হোক। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, আশা করছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকার নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘১৪ দল মনে করে, আর সময় ক্ষেপণ না করে জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তার মধ্যে দিয়ে এই দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে যাতে সন্ত্রাসী, জঙ্গি উত্থান না ঘটাতে পারে সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নিশ্চয় এক–দুই দিনের মধ্যেই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পাব।’
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ করা। বিভিন্ন ঘটনা পরম্পরা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটা ঐতিহাসিক এবং জাতির বর্তমান যে ক্রান্তিকাল সেই ক্রান্তিকাল থেকে উত্তোরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
এক রিট আবেদনের রায়ে হাই কোর্ট ২০১৩ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করলে এ দলটির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ হয়। গতবছর সর্বোচ্চ আদালতেও হাই কোর্টের ওই রায় বহাল থাকে। নিবন্ধন বাতিলের পর জামায়াত ২০১৯ সালের সংসদ নির্বাচনে তাদের জোটসঙ্গী বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নিয়েছিল। দীর্ঘ সময় বিএনপির সঙ্গে থাকা জামায়াত এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সঙ্গে জোটে নেই
পাঠকের মতামত